মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারাঃ
বাগমারার বারনই ও ফকিরনী নামক দুটি নদী ভরাট ও দূষনমুক্ত রাখার দাবীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাগমারা শাখার উদ্যোগে সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এফ,এম আবু সুফিয়ানের নিকট এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাগমারা পিএফজি’র সমন্ময়কারী সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, হাঙ্গার প্রজেক্ট রাজশাহীর জেলা কর্মকর্তা নাজমুল সোসাইন মিনা, বাগমারা ছাত্রলীগ সভাপতি নাদিরুজ্জমান মিলন, পিচ এ্যামবাসেডর ছাত্রলীগ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, সদস্য সান্টু, বাবু, ভবানীগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর সাহানারা আক্কেল।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভা দুটি প্রথম শ্রেণির হলেও এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন ভাগাড় নেই। যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। সর্বশেষ এসব ময়লা আবর্জনার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে নদীতে। আর এভাবেই সদ্য খননকৃত বারনই ও ফকিরানী নদী দুষিত ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এই দুটি পৌর এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখানকার ঘিঞ্জি দূর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশের কথা। বাসিন্দারা জানান, বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাগমারার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বারনই ও ফকিরানী নদী খনন করা হয়েছে। ফকিরানী নদীর ১৬ কিঃমিঃ ও বারনই নদীর ১৪ কিঃমিঃ মিলে মোট ৩০ কিঃমিঃ নদী খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সরকারের ব্যয় হয় পনের কোটি টাকা। নদী দুটি খনন করার ফলে এলাকাবাসী ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন। এখানে বন্যার ব্যাপকতায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
ফসল সহ কৃষকের ঘরবাড়ি রক্ষা পেয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন নদী খননের এক বছর না পেরোতেই যে ভাবে দুই পৌরসভার শত শত টন ময়লা আবর্জনা বারনই ও ফকিরানী নদী গর্ভে ফেলা হচ্ছে তাতে এই দুই নদী অচিরেই ভরাট ও দূষিত হয়ে যাবে। এছাড়া এসব ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এই পানি ফসলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত দুই দিন তাহেরপুর পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই। রাস্তা ঘাট সহ অন্যান্য অবকাঠামোয় প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা মোটামুটি উন্নত হলেও এখানে নেই কোন ভাগাড়। তাহেরপুর পৌর হাটের কসাইখানা, মুরগিহাটা ও তরকারি হাটা সহ গোটা হাটের মহল্লাবাসীদের প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা ফেলা নদীতে। হাটের ময়লাগুলো পেয়াজটাহা সংলগ্ন বারনই নদীতে ফেলে দেয় হাটের ব্যবসায়ীরা। তবে এই কাজে তারা সুইপার নিয়োগ করেছে।
কিন্তু ময়লা যাচ্ছে সব বারনই নদীতে। এছাড়া হাটের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে আজবর্জনা ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই হাটেই রয়েছে বেশ কিছু ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যগুলোও ফেলা হচ্ছে ওই বারনই নদীতে। হাটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজশাহী ঢাকার মত ময়লা ফেলার ব্যবস্থা চান। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অপরদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিয়ে একই উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার অবস্থা আরো করুন। এটিও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। শুরু থেকেই কোন ভাগাড় নেই। হাটের ময়লা ও মহল্লা বাসীর ময়লা সবকিছুই ফেলা হয় পাশ্ববার্তী ফকিরানী নদীতে। এছাড়া কসাইখানা, হিন্দুপাড়া ও মুরগী হাটার শত শত মণ ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। ভবানীগঞ্জ হাটের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, গোটা পৌরসভাই এখানে ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। সবাই যে যার মত নিজেদের ভাগ্যগড়া রাজনীতি ও ব্যবসা নিয়ে মহা ব্যস্ত। অথচ ময়লা আবর্জার মত একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। প্রতিদিন শতশত মণ ময়লা আবর্জনা এখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে।
এসব ময়লার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে ফকিরানী নদীতে। পাড়া মহল্লায় যত্রতত্র ময়লা ফেলার ফলে দূগন্ধময় পরিবেশে মশা মাছির উপদ্রপ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সরকারের কোটি কোটি কোটি টাকা( যা জনগনের ট্যাক্সের টাকা) গচ্চা যাচ্ছে নদী ভরাট ও দূষনের মাধ্যমে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকি ও ক্ষতির কারণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এফ,এম আবু সুফিয়ান জানান, আমরাও চাই না । এভাবে খননকৃত নদী ভরাট ও দুষনমুক্ত হোক। বাগমারার দুই পৌরসভায় ভাগাড় নির্মানের জন্য পৌরর্কৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।