বিজ্ঞাপন
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারাঃ
রাজশাহীর বাগমারায় বোরোধান কাটাই ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এবার বোরোধানের বাম্পার ফলন হলেও চাষাবাদের শুরু থেকেই উৎপাদনের বাড়তি খরচ মেটাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষককে। ফলে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করে স্বস্তি পাচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো ধান চাষের শুরুতেই নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে কৃষক। তারা জানান, এলাকায় অধিকাংশ জমিতে সেচ যন্ত্রগুলো বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। ফলে পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সেচ যন্ত্রগুলো অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সেচ যন্ত্র বন্ধ হওয়ায় বোরোচাষিরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে বৈশাখের শুরুতে কয়েকদফা বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তা কেটে যায় কৃষকদের।
তবে সার, বিদ্যুৎ, ডিজেল ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের বারবার মূল্যের কারণে কৃষকরা বাড়তি খরচের ঝুকির মুখে পড়েন। এখন ধান কাটাই মাড়াই করে বর্তমান বাজার দরে তাদের লাভের লাভ কিছুই থাকছে না। কৃষকরা ধান চাষ করে সকল উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লোকসানে পড়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুরা মাঠ জুড়ে বোরো ধানের সোনালী সমারোহ । এখানে আগাম জাতের বোরো ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক । এলাকার কৃষকরা জানান, ইরি-বোর ধানের উপর তারা বেশী নির্ভরশীল। মওসুমের শুরুতে লোকশানের বুঝা মাথায় নিয়ে যথারীতি বোর ধান চাষে তারা মাঠে নেমে পড়ে। কিন্তু পরিমিত বিদ্যুৎ না পেয়ে জমির লাগানো ধান শীষ বের হতে হতে কিছুটা সমস্যা হয়।
অতিরিক্ত খরা ও গরমে ফলনরত শীষের ধান সিদ্ধ ও জমির লাগানো ধান লাল বর্ণে বসে পড়ে । উপজেলার বালানগর, সগুনা, মচমইল, গাঙ্গোপাড়া দ্বিপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের কারণে তারা ঠিক মত সেচ যন্ত্রে পানি উত্তোলন করতে পারছেন না। এতে করে ধান ক্ষেত নষ্ট হতে বসেছে। মাড়িয়ার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি এবার সাড়েচার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। শুরুতে ক্ষেতের ধানের অবস্থা ভালো থাকলেও ধান পাকার সময়ে ব্যাপক খরা দেখা দেয়। এ সময় বিদ্যুতের ব্যপক লোডশেডিং শুরু হয়। তিনি বোরো ধান নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তবে বৈশাখের শুরুতে দুই দফা বৃষ্টিপাতে তিনি দুশ্চিন্তা মুক্ত হন।
হামিরকুৎসার কৃষক মঞ্জুর রহমান জানান, তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। কিছু উঁচু জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেন। এই ধান এখন কাটতে শুরু করেছেন। তার মতে ধানের বাম্পার ফলন হলেও বর্তমান বাজার মূল্যে তার উৎপাদন খরচই তোলা মুস্কিল হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুৃর রাজ্জাক জানান, এই উপজেলায় এবার সাড়ে বিশ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং সহ নানামূখী চ্যালেঞ্জ থাকলেও এখানে বোরোরে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ নিয়ে কৃষকরা যে আশংকা করছেন তা সাময়িক। বাইরের বেপারী সহ ধানের বড় বড় ক্রেতারা ধান ক্রয় শুরু করলে দাম আটোমেটিক বেড়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে বোরো ধান চাষের শুরুতে বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিং এর কারণে কৃষকর মারাত্বক ঝুকির মুখে পড়েন।তবে বৃষ্টিপাতে সেই ঝুকি অনেকটা কেটে যায়। তবে কৃষকদের দাবী বোরো ধান চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের দাবী জানান পল্লী বিদ্যুুত কর্তৃপক্ষের কাছে । এ বিষয়ে জানতে চেয়ে নাটোর পল্লী বিদ্যুতের বাগমারা জোনাল অফিসের ডিজিএম মিনারুল ইসলামের সাথে যোগাগে করা হলে তিনি বলেন, বরাদ্দের পরিমান খুবই কম।
চাহিদামত বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং চালাতে হচ্ছে। তার মতে, বৃহৎ এই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসাভা মিলে দিনে ৩৫ মেগওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেখানে মিলছে অর্ধেকের কম। তাই একটানা বিদ্যুৎ সচল রাখার ব্যপারে তাদের নিয়ন্ত্রন নেই । বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে সিস্টেম প্রটেকশান এর জন্য গ্রিডে কন্টোল থেকে সোর্স লাইনে দিনে ৫/৬ বার বন্ধ করতে হয়। এছাড়া ঢাকা থেকে মেইন লাইন বার বার কাটায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে ও একটানা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রতিমুহুর্ত্বের খবর দ্রুত পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত