বাগমারা প্রতিনিধি
মঙ্গলবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং উত্তর ও কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা সভায় বক্তব্যের শুরুতে রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদ, জাতীয় চারনেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। সেই সাথে বাগমারা আসনে বারবার ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়াও বাগমারাবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বারবার নির্বাচিত করার জন্য।
ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি ১ লা জুন মাননীয় অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছে সেটা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৮৫ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট মহান সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা এডিবি বরাদ্দ রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বাজেট বাস্তবায়ন করা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
তিনি আরো বলেন. ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের সময়ে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই সাথে সার এবং বিদ্যুতের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। জঙ্গিবাদ ছিল তাদের মূল কাজ। তারা সারাদেশে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামাতের সময়ে বাগমারা পরিণত হয়েছিল রক্তাক্ত জনপদে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বাগমারাকে জঙ্গিমুক্ত করতে এবং তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসনের সময়ে বাগমারা সহ দেশের কি অবস্থা হয়েছিল তার একটি ডকুমেন্টরি দেখানো হয়েছে। তাদের সময়ে হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, জঙ্গিবাদ নানা বিষয় ফুটে উঠেছে।
ভিডিও
এদিকে মহান সংসদে দেখানো ডকুমেন্টরি সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী জেলার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগমারা উপজেলা। ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বিশাল এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষাধিক লোকের বসবাস। বাংলার বার ভূঁইয়ার স্মৃতি বিজড়িত জনপদটি ধর্মীয় কারণেও তাৎপর্য বহন করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসবের আদি স্থান হিসাবেও পরিচিত এই উপজেলা।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও রয়েছে এ জনপদের রক্তাক্ত অবদান। ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর এই জনপদটি উপজেলার মর্যাদা পেলেও দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত রয়ে যায়। বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরের দুঃশাসনে বাগমারায় উত্থান ঘটে কথিত মধ্যযুগীয় ‘বাংলা’ ভাইয়ের যা বাগমারাকে একটি রক্তাক্ত ও সন্ত্রাসীর জনপদ হিসাবে পরিচিতি দান করে।
২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল তৎকালীন চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এবং তাদের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাভাই ও তার ক্যাডারদের প্রকাশ্য আর্বিভাব ঘটে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসায়। ওই দিনই সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে পলাশী গ্রামে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে ও পরে জবাই করে মেরে ফেলে যুবলীগ নেতা মনোয়ার হোসেন ওরফে বাবুকে।
রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গি বাহিনীদের প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেন তৎকালীন বিএনপির সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আলমগীর কবীর, রাজশাহীর মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফা ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শীশ মোহাম্মদ। তাদের মূল হোতা ছিল তারেক জিয়া। তাদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বাগমারা ও নাটোরের নলডাঙ্গা থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাগমারা, দুর্গাপুর, আত্রাই ও রাণীনগর এলাকায় সর্বহারা দমনের নামে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে ১৩ জন এরও বেশি মানুষকে। নির্যাতনে আহত হন আরো পাঁচ শতাধিক মানুষ। আর শাইখ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই ও তাদের সহযোগীদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ববরণ করেন কমপক্ষে ২০ জন। তারা আওয়ামী লীগ ও প্রগতি চেতনার লোকজনদের ধরে গাছের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে।
জেএমবির নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে হামিরকুৎসা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আতাউর রহমান আতা, একডালা গ্রামের কালাম মেকার, সাজুরিয়া গ্রামের আবেদ আলী মোল্লা, কনোপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী, মাড়িয়া ইউনিয়নের ইব্রাহীম হোসেন,চানপাড়ার মাহাবুর রহমান, পলাশী গ্রামের আয়নাল, কুদ্দুস, ফেরদৌস, সোহরাব, ইসমাইল, শেনোপাড়া গ্রামের ডুগু, বাজে গোয়ালকান্দির রমজান আলী, শাহপাড়ার একরাম আলি শাহ, হাসানপুর গ্রামের ফজলু সহ অনেককে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়।
এছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা সাঁকোয়া গ্রামের ইয়াছিন আলী, শ্রীপুর ইউনিয়নের মাহাবুর রহমান, তাহেরপুর পৌরসভার বাসদ নেতা আলী আকবর, গোয়াকান্দি ইউনিয়নের গোলাম রাব্বানী মুকুল একই ইউনিয়নের আবু তালেব ভুট্টা, যোগীপাড়া ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, রানীনগরের আবদুল কায়ূম ওরফে বাদশা, যুবলীগের কর্মী খেজুর আলী, প্রশান্ত, সুশান্ত, দীপঙ্কর, শেখ ফরিদ, দুর্গাপুরের আজাহার মেম্বার উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি তারা এলাকায় ব্যাপক লুটপাট চালাতে থাকে।
জানা গেছে, জঙ্গি নেতাকর্মীরা বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের ছত্রছায়ায় চরমপন্থী সদস্যদের উৎখাতের নামে রাজশাহী অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের এই কর্মকান্ড নিয়ে মিডিয়া সরব হলেও সরকার ছিল পুরোপুরি নীরব। সরকারের রহস্যজনক নীরবতা নিয়েও গণমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়। তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গী নেতা বাংলা ভাইয়ের বর্বরতার কথা তুলে ধরেণ দেশী বিদেশী গণমাধ্যমে।
বাংলাভাই নিজে সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার দিয়ে তার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানান দিলেও তখন সরকার জঙ্গী তৎপরতার উপস্থিতি পুরোপুরি অস্বীকার করে। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী বলেন, ‘বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গিদের আড়াল করার চেষ্টার কিছুদিন পরই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে জেএমজেবি ও জেএমবি তাদের সরব উপস্থিতির জানান দেয়। এ ঘটনাটি জাতিকে স্তম্ভিত ও বিস্মিত করে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি সমগ্র দেশে একযোগে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ব্রিজ-কালভার্ট, কৃষি সহ এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নয়ন সংগঠিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে দেশের উন্নয়ন সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারীর কারণে অশান্ত আর রক্তাক্ত বাগমারা এখন শান্তির জনপদে পরিনত হয়েছে। বাগমারায় এখন আর কাউকে লাল চিঠি পড়তে হয় না। নেই কোন ভাইয়ের আর্বিভাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় অশান্ত বাগমারাকে উন্নয়নের রোল মডেলে নিয়ে যাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। তাঁর নেতৃত্বে অবহেলিত আর রক্তাক্ত জনপদ সরকারের নানা মুখী উন্নয়নে সমৃদ্ধ হয়েছে।
ভবানীগঞ্জের চাঁনপাড়ায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৬ তলা বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সে রয়েছে মহান মুক্তিযোদ্ধের নানা ইতিহাস। ২০১৩ সালে কমপ্লেক্সটির শুভ উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স পরিদর্শনে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এছাড়াও সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপিও আসেন এই জাদুঘর কমপ্লেক্স পরিদর্শনে। বহুতল এই কমপ্লেক্সে রয়েছে দলীয় কার্যালয়। রয়েছে সহযোগী সংগঠনের আলাদা আলাদা অফিস।
অপরদিকে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অদ্যাবধি বাগমারা এলাকায় জেএমবি ও সর্বহারাদের হাতে আর কাউকে খুন বা জখম হতে হয়নি। এক সময়ের জঙ্গি অধ্যুষিত রক্তাক্ত বাগমারা আজ শান্তির জনপদ।