বিজ্ঞাপন


স্টাফ রিপোর্টার বাগমারা:
রাজশাহীর বাগমারায় নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের এক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে নরদাশ গ্রামের মৎস্য চাষী জোনাব আলী (৪৪), কর্মচারী বেলাল হোসেন (৩৮), আবেদ আলী (২৬), বাবুল হোসেন (৪০) ও জোনাব আলী প্রাং (৩৫) কে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। ওই সংবাদ লেখা পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষই মামলা করে নি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বিলে মাছ চাষের জন্য দখলদারকারী মাছ চাষীদের সাথে বিলের প্রকৃত জোতদারদের মধ্যে জমির লীজ মূল্য না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্ব মিমাংসার জন্য বুধবার নরদাশের ডাকের মোড় এলাকায় উভয় পক্ষে একটি মিমাংসার বসে। কিছুক্ষন আলোচনা চলার পর উভয় পক্ষে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
এ সময় বিলের মৎস্য চাষী মজিবুর রহমান, জোনাব আলী, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে বিলের জোতদারদের উপর উপর আক্রমন করে। খবর পেয়ে বিলের অন্যান্য মৎস্যচাষীরা মাধনগরে ছুটে যান এবং উভয় দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
ভূক্তভোগীরা জানান, গত চৌদ্দ বছর ধরে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী হাতিয়ার বিলে মাছ চাষ প্রকল্পের নামে জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে। এতে বিলের চারপাশের পাঁচ গ্রামের জমির মালিকরা বঞ্চিত হচ্ছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের নিকট আবেদন করেন। প্রভাবশালীদের হাত থেকে হাতিয়ার বিল রক্ষার জন্য অচিরেই প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, হাতিয়ার বিলের জমির মালিকরা ন্যায্য পাওনা চাইতে গেলে প্রভাবশালীদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়ে অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিতে চাইলে প্রভাবশালীরা তা তোয়াক্কা না করে বিল দখল নিতে সন্ত্রাসী কায়দায় হাসুয়া, লাঠি, চাকু, দা নিয়ে এলাকার জোরদারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য বিলের চারি দিকে ২০/২৫টি মোটর সাইকেল নিয়ে শোডাউন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এতে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা চলতে থাকে।
উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের চারপাশে হাট মাধনগর, বাঁইগাছা, সুজনপালশা, চন্ডিপুরসহ পাঁচটি গ্রাম। হাতিয়ার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্প নাম দিয়ে প্রভাবশালীরা জমি মালিকদের ঠকিয়ে এক যুগ ধরে সেখানে মাছ চাষ করে আসছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি তমেজ উদ্দিন এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন বিল দখলের জন্য একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলে জমি মালিকরা মাছ চাষ করতে না পারলেও যাদের জমি নাই এমন অনেক প্রভাবশালীও রয়েছে দখল কমিটিতে। সুজনপালশা গ্রামের মৃত মেজতুল্ল্যার ছেলে তমেজ উদ্দিন, মৃত শরিয়তুল্যার ছেলে আব্দুল মতিন, নরদাশ গ্রামের রফাতুল্ল্যার ছেলে সেকেন্দার আলী, রহিম বক্সের ছেলে রফিক উদ্দিনসহ কতিপয় প্রভাবশালী ওই বিলে জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে।
বিভিন্ন সময়ে কৃষকরা বাধা দিলেও ওই এলাকার প্রভাবশালী ও তাদের পেটুয়াবাহিনী নরদাশ গ্রামের জোনাব আলী, আব্দুল মান্নান, ঝাফর আলী ও সুজনপালশা গ্রামের আফজাল হোসেনসহ বেশ কিছু লাঠিয়ালবাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় হাসুয়া, লাঠি, চাকু, দা নিয়ে এলাকার জোরদারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। এর আগে সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়েছেন নরদাশ গ্রামের মোবারক হোসেন, রফিকসহ অনেকেই। তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকে। প্রাণ ভয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকছে বলেও জানায় ভূক্তভোগীরা।
সাবেক ইউপি সদস্য চন্ডিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী, সাবেক ইউপি সদস্য নরদাশ গ্রামের মুনছুর রহমানসহ কৃষক মজিবর রহমান, মোবারক হোসেন, হাটমাধনগরের দেলোয়ার হোসেন, আলামিন, সুজনপালসা গ্রামের আব্দুর রহিমসহ অন্তত চার শতাধিক কৃষক দখলকারীদের হাত থেকে বিলটি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন। নতুন ভাবে কৃষকরাই বিলে মাছ চাষ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।
অপর দিকে ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার আবুল জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিস্পত্তির চেষ্টা করেছি। একটি পক্ষ না আসায় আমি বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, বিল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এক পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।#
প্রতিমুহুর্ত্বের খবর দ্রুত পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন
বিজ্ঞাপন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত