বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারায় গত ৫ আগস্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ছয়টি। মামলাগুলো মূলত নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে করা হয়েছে। ছয়টি মামলায় আসামী করা হয়েছে ২ হাজার ৭ জন। এর মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ১৬৭ জনের। অজ্ঞাত নামে রয়েছে আরো ১ হাজার ৮শত ৪০ জন। দুটি বাদে প্রায় প্রতিটি মামলায় ভবানীগঞ্জ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের সামনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। দায়েরকৃত ৬টি মামলার প্রতিটিতে রয়েছে নামে-বেনামে অসংখ্য অনেক লোকের নাম।
যে ঘটনা উল্লেখ করে মামলাগুলো করা হয়েছে তার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও আসামীর তালিকায় অনেকের নাম দেখা গেছে। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে গণহারে নাম উল্লেখ করায় উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তষ দেখা দিয়েছে। মামলাগুলোতে অনেক সম্মানি ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যারা সে দিনের ওই উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। সেই সাথে অনেক আসামী সে সময় বাগমারাতেই ছিলেন না। সাধারণ মানুষকে হয়রানী করতে একটি পক্ষ কিছু লোকজনকে মামলা দায়ের করতে উৎসাহিত করছেন বলেও জানাগেছে। তবে মামলা থেকে নাম কার্টিং করতে শুরু হয়েছে রমরমা বাণিজ্য বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাগমারা থানা সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ মামলা দায়ের করা হলেও বাদীর সংখ্যা ৫ জন। একজন বাদী হয়ে ২টি মামলা দায়ের করেছে।
৫ আগস্টের ওই ঘটনায় হামিরকুৎসা ইউনিয়নের খাঁপুর গ্রামের আব্দুল মতিন বাদি হয়ে গত ১৮ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করে। সে মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ সহ ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে। একই ঘটনায় ভবানীগঞ্জ চাঁনপাড়া মহল্লার আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে ২৫ আগস্ট ২৪ জনের নাম উল্লেখ সহ ২০-৩০ জনের নাম দিয়ে মামলা দায়ের করেন। ৫ আগস্ট ভবানীগঞ্জ এবং তাহেরপুর বাজারের টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কাইকারছলা এলাকার শামীম মিয়া নামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে গত ২৭ আগস্ট দুটি মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলায় ৫০০-৭০০ জন করে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। সেই সাথে ২৮ আগস্ট রামরামা গ্রামের শিমুল খাঁ বাদি হয়ে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ সহ ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ রামরামা গ্রামের মুনসুর রহমান বাদি হয়ে ১০ সেপ্টম্বর ৭৩ জনের নাম উল্লেখ সহ ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সহ তার পক্ষের লোকজনকে আসামী করা হয়েছে। তবে মুনসুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় আসামী করা হয়েছে সাবেক আরেক সংসদ সদস ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক সহ তার কয়েকজন নেতাকর্মীকে। তারা সেদিন বাগমারা বা ঘটনাস্থলে না থাকলেও তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। এরই মধ্যে দায়েরকৃত ওই সকল মামলায় বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।
গত ৫ আগষ্ট কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে সকাল থেকে ছাত্র-জনতার উপর ধাওয়া, দোকান ভাঙচুর, লাঠিপিটা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ সহ অনেক ঘটনার জন্ম দেয় আবুল কালাম আজাদ এমপি সহ তার লোকজন বলে জানাগেছে। তাদের দাঙ্গা-হাঙ্গামার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই দিনের অস্ত্রধারীরা বিভিন্ন অপকর্ম করলেও তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। গা’ঢাকা দিয়েছে তারা। প্রকৃত অপরাধীর অস্ত্রধারীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় সাধারনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ওই সব অপরাধীরা কোন এক দলের নেতাকর্মীকে চাঁদা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে বিশিষ্ট জনেরা দাবি করছেন।
বাগমারায় বিগত সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সন্ত্রাসী বাহিনী উপজেলা জুড়ে চাঁদাবাজি, লুটতোরাজ এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করলেও তাদের মুল অংশের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেই। এদের কাজে সহযোগীতায় এলাকার প্রভাবশালী ও স্বার্থনেষীমহলসহ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বর্তমানে রাজনেতিক পেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও ওই প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। এক ধরনের সুবিধাভোগীরা মামলা করতে গেলে তাদেরকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন। কেউ কেউ আগে দোষীদের সাথে যোগাযোগ করে অর্থ লুটে নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। এমনই একটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এজাহার লিখে তার কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। ওই মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করে অনেকে। ওই ঘটনায় কেউ কেউ ফায়দা হাসিল করে বলেও অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বাদী আর মামলা দায়ের করেননি। মামলা না হওয়ায় হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পায় সাধারণ মানুষ। দায়েরকৃত মামলার কয়েকজন বাদীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ ঘটনায় বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। মামলায় ২ হাজারের অধিক আসামী। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।