স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারাঃ
বাগমারা উপজেলার সকল রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। তারা এই উপজেলার প্রতিহিংসা ভুলে শান্তি সম্প্রতি বজায় রেখে সহ অবস্থান নিশ্চিকরণে আচরণ বিধিতে স্বাক্ষর করেছেন। বাগমারা উপজেলার ইতিহাসে এ এক অভ’তপূর্ব নজিরবিহীন ঘটনা। এলাকার সুধী মহল ও সাধারন জনতা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সহযোগীতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বাগমারা উপজেলা মিলনায়তনে বাগমারা পিএফজির আয়োজনে একটি ও র্যালী অনুষ্ঠীত হয়। বাগমারা উপজেলা পরিষদ হতে শুরু হওয়া র্যালীটি উদ্ধোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এ এম আবু সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে মর্যাদা, নিরাপত্তা, বহুত্ববাদ এবং শান্তি -সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলসমূহের আচরণবিধিতে উপজেলা আওয়ামিলীগের পক্ষ থেকে সাক্ষর করেন উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল, বিএনপির পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান রনজু ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সাক্ষর করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন সরুজ , ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি অধ্যাপক মেসবাউল হক দুলু, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাজুসহ স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিগণ। শান্তির সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী- ৪ বাগমারা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিঃ এনামুল হক অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, বাগমারা উপজেলা পিএফজির সমন্বয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স। শান্তির সমাবেশটি সঞ্চলনা করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ।
মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জি এনামুল হক আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার অঙ্গিকার করেন এবং বলেন বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির দেশ। আমি আমার নির্বাচনের পর একটি শান্তির বাগমারা তৈরি ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করার জন্য কাজ করছি। বিরোধী দলের প্রতি কোনো মামলা বা হামলা করার কোনো চেষ্টা করি নাই। বাগমারা ছিলো একটি রক্তাক্ত জনপথ। আজকে বাগমারার ছাত্র সমাজ, কৃষক সমাজসহ সকল পেশার মানুষদের নিয়ে শান্তির বাগমারা তৈরি করতে পেরেছি। আমি সবাইকে আহ্বান করবো আপনারা সকলে সহবস্থান নিশ্চিত করে শান্তির পরিবেশের ভিতর দিয়ে একটি উন্নত বাগমারা গঠন করতে সহযোগিতা করুন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এ.এম আবু সুফিয়ান বলেন, আজকে আয়োজিত এ শান্তির সমাবেশ একটি ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ। বাগমারা পিএফজির এ প্রচেষ্টা বাগমারায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। যদি বিভিন্ন দলের মধ্যে শান্তি বজায় থাকে তাহলেই শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি থাকবে। কিন্তু শান্তিপূর্ন সহবস্থান নিশ্চিত করণে কোনো বিরোধ বা দ্বন্ধ যেন প্রকট আকার ধারণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরবর্তীতে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার কাজ করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ তার আদর্শে কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতা বাগমারায় নাই। আমরা একইসাথে আলোচনা করে কাজ করছি। আপনারা সকল দলের নেতৃবৃন্দ যদি এগিয়ে আসেন এবং কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করেন তাহলেই এখানে সব সময় শান্তি বিরাজ করবে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. মনিরুজ্জামান রনজু বলেন, শান্তি সম্প্রীত ভালোবাসা একথাগুলো আমরা ভুলে গেছি। আমরা নিজ দলের ভিতর দ্বন্ধ, বিরোধি দলের সাথে দ্বন্ধ দেখি যা ভাই ভাইতে দ্বন্ধ পরিনত করেছে। আমরা যদি আজকের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বুঝতে পারি তাহলে বাগমারায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আমরা যেন নিজেদের রাজনৈতিক শত্রু মনে না করি, প্রতিপক্ষ মনে না করি। আমরা সকল নেতারাই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছি। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের ক্ষমতাবলে আমাদের গ্রেফতার করার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক সহবস্থানের সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
এ বিষয়টি আমি ক্ষমতাসিন নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আসুন আমরা একসাথে বাগমারাকে শান্তির বাগমারা তৈরি করি। উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব বলেন, ২০১৭ সালে যখন পিএফজি কাজ শুরু করে তখন এর সাথে কেউ জড়িত হচ্ছিলো না। তাদের সবার ধারণা ছিলো রাজনৈতিক দলের সহবস্থান, একসাথে আলোচনা কিভাবে সম্ভব। অথচ আমরা এখন দেখছি এটা সম্ভব। আজ একই মঞ্চে আওয়ামিলীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি বসেছে। আমার ভালো লাগছে এবং হাঙ্গার প্রজেক্টকে ধন্যবাদ। তারা এ অসম্ভব কাজটি করতে পেরেছে। আমাদের এ কাজ গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে যার মাধ্যমে আবার আমরা সহবস্থানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে পারি। পৌর আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, হাঙ্গার প্রজেক্ট সারা বাংলাদেশে কাজ করছে। আমাদের আরো সৌভাগ্য যে তারা বাগমারায় কাজ করছে এবং সফললতা পাচ্ছে । রক্তাক্ত বাগমারা যেখানে বাংলা ভাই, সর্বহারাদের রাজত্ব ছিলো । অথচ সহজ সরল বাগমারাবাসী এগুলো তৈরি করেনি। আজকের সমাবেশ থেকে সকল দলের নেতৃবৃন্দ আজ অঙ্গিকার করবো শান্তির বাগমারা গড়ার এবং রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিত করার।
সভার সভাপতি মাহফুজুর রহমান প্রিন্স তার সমাপনি বক্তব্যে বলেন, উৎকৃষ্ট মুসলমান সেই ব্যাক্তি যার দ্বারা তার প্রতিবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। বিশ্ব নবীর আদর্শ ছিলো শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ। আমরা আজ এ মঞ্চ থেকে শপথ নেবো আমরা রাজনৈতিক সহিংসতা করবো না।