বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারার বিলসূতি বিল প্রভাবশালী দখলদার সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উম্মুক্ত রাখার দাবিতে মৎস্যজীবী ও সাধারণ লোকজন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচি থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিলের ধারের ১৮ গ্রামের প্রায় দুই হাজার লোক বিলসূতি বিল উন্মুক্ত রাখার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের সামনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে অবৈধভাবে ইজারা পাওয়া ‘আর্দশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডে’র নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মৎস্যজীবীদের দেওয়া স্মারকলিপি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দ্বীপপুর ও বড় বিহানালী ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে বিলসূতি বিল অবস্থিত। বিলের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমি ব্যক্তি মালিকানা। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ১২৯৬ বিঘা ইজারা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর থেকে ছয় বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন করে তৃতীয় দরদাতা হিসেবে স্থানীয় ‘আর্দশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডে’র নামে ছয় বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, বিলটি মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা দেওয়া হলেও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী বিলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।
এছাড়া ওই সমিতির নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সমিতির অধিকাংশ সদস্য চাকুরিজীবী। তাঁরা প্রভাবশালীদের নিয়ে জোর পূর্বক মাছচাষ করার কারণে সাধারণ মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। বিলের ধারের মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে মামলা, ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসলিন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বিলের চারপাশের দ্বীপপুর ও বড় বিহানালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই হাজার সাধারণ লোকজন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানবন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি স্থানীয় কার্ডধারী মৎস্যজীবীরাও ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের সামনে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
আন্দোলনকারীরা বিলটি উম্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্যে মৎস্যজীবী জাহিদুল ইসলাম, অমূল্য হালদার, গুলেমান, আব্দুল কুদ্দুস, মাসুম ও জনি ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা বিলটিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিলের ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই প্রভাবশালী স্থানীয় মাষ্টার সেলিম রেজা, মাষ্টার ফজলুর রহমান, মাস্টার নজরুল ইসলাম, রেজাউল করিম, কামাল হোসেনসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ও চাকুরীজীবিরা লিজ নেয়ার নামে পুরা বিল দখল নিয়েছেন। সাধারণকে মাছ ধরতে বাধাও দেওয়া হচ্ছে। সমাবেশ শেষে বিলটি উম্মুক্ত ঘোষণার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এদিকে আন্দোলনকারীরা দুপুরে ইজারা নেওয়া সমিতির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়ে সমবায় কর্মকর্তার দপ্তরে ঢুকে দাবি জানান। তাঁদের দাবির প্রেক্ষিতে সমবায় কর্মকর্তা সমিতির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন সমবায় কর্মকর্তা আবদুল মান্নান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, বিলটির সরকারি অংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে, তা বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের পরামর্শ নেওয়া হবে। লোকজন বিলের সরকারি জমির অংশ বাদে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে মাছ ধরতে পারবেন বলেও জানান।